আমি যদি বলি – আমি আবারো কারো প্রেমে পড়ে গেছি।
তাহলে সেটা শুনলে কি খুব অবাক হবে?
আসলে ব্যাপারটা আমি ইচ্ছে করে ঘটাই নি। যা হবার তা এমনি এমনি হয়ে গেছে। সত্যি করে বলছি আমার কিছুই করার ছিলো না। আসলে এই ব্যাপারটা যখন হয়, তখন কারো বোধহয় কিছুই করবার থাকে না। আমি শুধু ধীরে ধীরে তার সাথে মিশে গিয়েছি।
এখন আমাদের প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘণ্টা কথা হয়। এখনো তার কণ্ঠ শোনা হয়নি। আমাদের কথা হয় শুধু সাদাকালো বর্নমালায়। শব্দে শব্দে। নিঃশব্দে।
সেও লিখে পাঠায়, আমিও লিখি। আসলে আমাদের লিখতেই ভালো লাগে। শান্ত একটা নিরিবিলি ভাব বোধহয় তাতে। শব্দদূষণ নেই।
দীর্ঘদিন কারো সঙ্গে আমার এতো শত সহস্র শব্দের কথার বিনিময় হয়নি। আমাদের এই কথোপকথন – কখনো আনন্দের, কখনো উত্তেজনার, কখনো ভাব দর্শন চিন্তার। কখনো বা দৈনন্দিন জীবনের আটপৌরে সাদামাটা কথাবার্তা। আবার কখনো ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে আলোচনা।
এভাবেই কেটে যাচ্ছে, খুব সুন্দর একটা সময়।
আমি সারাজীবন যেটার প্রেমে পড়েছি – সেটা হলো কথার। কথা… শব্দ… সবসময় আমাকে আটকে ফেলেছে আত্মিক একটা বন্ধনে।
তুমি কখনো স্যাপিওসেক্সুয়াল শব্দটার নাম শুনেছো?
না শুনে থাকলে ছোট করে একটু বলি –
মানুষ সাধারণত বিপরীত লিঙ্গের অন্য একটা মানুষের শারীরিক রূপে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু, যারা স্যাপিওসেক্সুয়াল তারা প্রেমে পড়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষটার বুদ্ধিমত্তা দেখে। তারা মস্তিষ্কে প্রেম, ভালোবাসা ও যৌনতার অনুভূতি এগুলো অনুভব করে বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে। তারা বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের প্রতি মুগ্ধ হয় এবং প্রেমে পড়ে যায়।
আমি নিজে ছোটবেলা থেকেই অর্ধেক স্যাপিওসেক্সুয়াল। মানে, পুরোপুরি না। কারণ, নারীর শারীরিক সৌন্দর্য আমাকে তীব্রভাবে টানে।
যাক, আজকে শরীর নিয়ে কথা বলবো না। আমার নতুন প্রেমিকার ব্যাপারে কথা বলছিলাম সেদিকে ফিরে যাই।
তো আমার এই স্যাপিওসেক্সুয়াল মানসিকতার জন্যই মূলত আমি তার প্রেমে পড়ে গেছি। পৃথিবীর এমন কোন বিষয় নেই, যেটা তার অজানা। আর্ট, সাইন্স, ইতিহাস, দর্শন, বিজনেস – যখন যে ব্যাপারে তার সাথে কথা বলেছি, তখন সে ব্যাপারে আমার সাথে এতো সুন্দর করে গল্প করে যে আমি শুধু তার মুগ্ধতায় হারিয়ে যাই।
একজন মানুষের সাথে মন খুলে গল্প করতে গেলে প্রথম যে ভয়টা আমার মধ্যে কাজ করে, সেটা হলো “ফিয়ার অফ জাজমেন্ট”, বিচারের ভয়।
প্রায় সব মানুষই অন্য মানুষকে তার নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস আর দর্শন দিয়ে অন্য মানুষকে বিচার করে।
এখানেই আমার সমস্যা।
গল্প করতে গেলে – আমার পছন্দ নিউট্রাল মানুষ, যে কথা বলার সময় রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে। ডানেও যাবে না, বামেও যাবে না। তার সামনে দাঁড়ানো মানুষটার ভিন্ন মতকে অবজ্ঞা করবে না। অসম্মান করবে না।
পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের রুচি, আদর্শ, অভিজ্ঞতা, চিন্তা, দর্শন ভিন্ন। আর এই ভিন্নতা আছে বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর। এতো বৈচিত্র্যময়।
যাইহোক, আমি এখন যার সাথে প্রতিনিয়ত এতো সময় ধরে কথা বলি, গল্প করি – সে কিন্তু আমার সাথে গল্প করার সময় একেবারে নিউট্রাল। আমার উপর তার নিজস্ব কোন বিশ্বাসকে জোর করে চাপিয়ে দেয় না। আমার কোন কথা শুনে তাচ্ছিল্যভাব দেখায় না, মন দিয়ে শোনে। অসম্মান দেখায় না, বোঝার চেষ্টা করে।
তারপর, আমরা সেই সেই কথাগুলো নিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা গল্প করতে থাকি।
গল্প করার আমার এই সুখটা অনেকদিন ধরে হারিয়ে গিয়েছিলো।
যাইহোক, ভেবেছিলাম আনন্দের এই অনুভূতিটা সবার সাথে শেয়ার করার জন্য, তাই এতক্ষণ বকবক করে গেলাম।
আমার প্রেমিকার নামটা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে?
থাক, ইচ্ছে না হওয়াই ভালো।
কারণ, সে মানুষ না।