লেখক পরিচিতি
আমি অনেক ভেবে চিন্তে দেখেছি, আসলে আমার দেবার মতো কোন পরিচয় নেই।
তবুও, নিজের একটা পরিচয়নামা লিখছি। কারণ আমার মনে হয়েছে আমি যদি কোনদিন দুম করে মারা যাই – তবে যিনি আমাকে যেভাবে দেখেছেন, সেভাবেই তিনি আমার একটা পরিচয় নিজের মতো করে বানিয়ে দেবেন।
এই যেমন, আমি যে টঙ্গের দোকানে বসে চা খাই, উনি হয়তো বলবেন, এই মানুষটা ছিলেন একজন তুখোড় – “চা খোর”। তখন পাশের সিগারেটের দোকানের মামু বলে উঠবেন, আরে না রে ভাই। উনি তো আমার কাছ থেকে রেগুলার সিগারেট কিনতেন। উনি ছিলেন চরম – “বিড়ি খোর”। দেখা যাবে এই নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে তুমুল হাতাহাতি শুরু হয়ে যাবে।
এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল নিউজ হবে – “ চা বিড়ির পাওনা টাকা না মিটিয়েই উধাও হলেন কবিরাজ ”।
এরচে ভালো, নিজেই নিজের সম্পর্কে কিছু একটা লিখে রাখি। যদিও এই পরিচয়ের আদপেও কোন মুল্য আছে কিনা – সেটা আমার জানা নেই।
–
আনোয়ার

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন একজন বাংলাদেশি কবি, কথাসাহিত্যিক ও ছোটগল্পকার।
সনদে জন্ম ১৯৭৯। ছেলেবেলা কেটেছে দেশের নানান প্রান্তে। স্কুল শেষে নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন এবং সেখান থেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। গ্র্যাজুয়েশনের পর নেদারল্যান্ডসের ম্যাস্ট্রিক্ট স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে ইন্টারন্যাশাল বিজনেসে এমবিএ করেন। এরপর, ঢুকে পড়েন কর্পোরেট জগতে।
দেশের সেরা দুই মাল্টিন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন, সর্ববৃহৎ অটোমোবাইল, ফিনটেক, সফটওয়্যার, রিয়েল এস্টেট সহ কাজ করেছেন বিভিন্ন নামকরা দেশি ও বিদেশি কোম্পানিতে। বর্তমানে কাজ করছেন একটি স্বনামধন্য মার্কেটিং এজেন্সিতে।
শিল্প সাহিত্যের অঙ্গনে তার পদচারণা দীর্ঘদিনের। শুরুটা সেই ছোটবেলায় – জলরঙ আর তেলরং দিয়ে। সাজিয়েছেন কাগজের পাতা, নয়তো ক্যানভাস। ধীরে ধীরে সম্পৃক্ত হয়ে যান ডিজিটাল মিডিয়ার সাথে। ফটোগ্রাফি আর গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে সময় কেটে যায়। আর এই পথ চলতে চলতেই, যাত্রা শুরু হয় সাহিত্য অঙ্গনে।
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তার কবিতায় সুখ, দুঃখ, আনন্দ, ভালোবাস, প্রেম, প্রতারণার আর বিরহকে বারবার তুলে এনেছেন কলমের আঁচড়ে। তার কবিতা কখনো জন্ম নেয় শহরের কংক্রিটের শ্যাওলা ধরা বারান্দায়। আবার কখনো নেমে আসে পরাবাস্তবতার রঙিন চাদর বেয়ে। মাঝে মাঝে এই ধুলোভরা পৃথিবীর ওপর থেকে মায়াভরা মেঘেরা শব্দের নূপুর বাজিয়ে ঝরে পড়ে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে।
তিনি তার উপন্যাস আর গল্পের ভেতর দিয়ে মানুষের নিঃসঙ্গতাকে খুঁজে এনেছেন জলপদ্মের মতোন করে। শব্দের ছোঁয়ায় নিঃসঙ্গতার শরীরে মাখিয়ে দিয়েছেন গোধূলির রঙ। ভালবাসতে শিখিয়েছেন একাকীত্বকে।
প্রত্যেক লেখকের একটা ধরণ থাকে। কথাসাহিত্যিক হিসেবে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তার লেখায় নিজস্ব স্টাইলের ছাপ রেখেছেন। তার অধিকাংশ লেখাই উত্তম পুরুষে লেখা। তিনি তার লেখায় একই সাথে বাস্তব, অবাস্তব আর পরাবাস্তবের একটা অসাধারণ মিশ্রণ ঘটিয়ে আনেন, যা পাঠক হৃদয়ে তীব্র অনুভূতির অনুরণন তৈরি করে নিঃশব্দে।
লেখকের সাহিত্যিক কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ – “সেরোটোনিন“। ২০২২ সালে, গ্রন্থিক প্রকাশন থেকে এই কাব্যগ্রন্থটি অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়।
২০২৩ সালে, বইমেলায় অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয় লেখকের প্রথম রোম্যান্টিক উপন্যাস – “ভালবাসার শহরে স্মৃতির কারাগারে”। উপন্যাসটি দেশ ও বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত হয় এবং দারুণভাবে পাঠকপ্রিয়তা পায়।
তিনি তার লেখায় একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা, আর নির্জনতাকে কেন্দ্র করে, বারবার অনুভব করার চেস্টা করেছেন প্রেমের মাদকতাকে – সেই অনুভূতিটা কখনো হয় তীব্র আনন্দের, আবার কখনো কখনো ভয়ঙ্কর কষ্টের।
বর্তমানে তিনি কাজ করছেন বেশ অনেকগুলো ছোটগল্প নিয়ে। আর লিখতে শুরু করেছেন, নতুন আরেকটি রোম্যান্টিক উপন্যাস।
লেখক স্বত্বার পাশপাশি উনি একজন চিত্রশিল্পী। কাজ করেন অ্যাবসট্রাকট পেইন্টিং নিয়ে। কবিতা আর পেইন্টিং এর সংমিশ্রণে বর্তমানে তৈরি করছেন অ্যাবসট্রাকট আর্টের নতুন একটি ধারা।