আজ থেকে দুশো, পাঁচশ কিংবা হাজার বছর আগে, এই পৃথিবীর কোথাও কোন এক কোণে এক দুরন্ত কিশোর কিংবা কিশোরী সাদা মেঘের নিচে হেঁটে বেড়াচ্ছিলো, নয়তো বসে ছিলো।
কি ছিলো তার মনের ভাবনা। কেমন ছিলো তার আশপাশ। পায়ের নিচে কি ছিলো – মাটি নাকি বালু। বাড়ির পাশে কি দীর্ঘ শীতল কোন নদী ছিলো, নাকি ছিলো ধুলো ওঠা ধূ ধূ মরুভুমি।
এসবের কোন কিছুই আমি জানি না। কিন্তু, এদের কারো কারো জিনের অনুলিপিতেই তৈরি হয়েছে আমার শরীরের নীলনকশা।
এই আমি পুরনো মানুষগুলোর কারো না কারো মতোন করেই ভাবি। তাকে যে চিন্তাগুলো প্রভাবিত করতো, সেগুলো আমাকেও করে। তাদের কারো মতোন করে আমি স্বপ্ন দেখি, কারো মতোন করে আলো কিংবা অন্ধকারে ভয় পাই। কিন্তু, সে কে? সেটা আমি জানি না।
জেনে যে আমার খুব একটা লাভ হবে, তেমনটা না। তবে, মাঝে মাঝে শুধু মনে হয় – কেমন ছিলো সে, কেমন ছিলো তারা।
প্রাচীন পৃথিবীর কোন প্রান্তে হেঁটে বেড়িয়েছে তারা।
.
এইতো বেশ কদিন আগে, গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
আমার বড়মামা তার শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নেবার পর থেকে, সবকিছু গুটিয়ে সেখানে চলে গেছে।
দুজন বসে পুরোনো দিনের গল্প নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে, আমার চোখ পড়লো বাড়ির কোণায় রাখা সবুজ রঙের একটা সিন্দুকে। বেশ বড়সড় ভারী লোহার সিন্দুক। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কোথা থেকে এলো?
উনি বললেন, এটা তো তোর নানার ছিলো, মনে নাই।
আমার আসলেই মনে নাই।
আমি বললাম, এই জিনিস উনি কোথায় পেলো। মামা বললেন, এটা পুরোনো এক রাজবাড়ির বাড়ির সিন্দুক। সেই সময়টায় অনেক এলাকার জমিদাররা যখন তাদের জমিদারী ছেড়ে দিচ্ছিলো, কিংবা হাত বদল হচ্ছিলো, তখন তাদের অনেকেই বাড়ির অনেক কিছু বিক্রি করে দিয়েছিলো। এইটা তেমনই একটা জিনিস।
কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম, এটার ভেতরে কি? উনি বললেন, আমাদের জমিজমার পুরোনো দলিল।
তারমানে, তো এই কাগজপত্রে নানার বাবার নাম, কিংবা তার দাদার নাম আছে, তাই না, বলে মামার দিকে তাকাতেই মামা বলল, হ্যাঁ… তাতো আছেই।
ব্যাস… আমার মনে হলো, এই তো সেই জিনিস যেটা আমি খুঁজছিলাম।
আমার অনেকদিনের একটা ইচ্ছে ছিলো, একটা ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করার। বিশেষ কোন কারণ নেই। পুরোটাই আমার শখ। কিন্তু, হাতের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিলো না। এখন মনে হচ্ছে, এই সিন্দুকের ভেতর আমার তথ্যগুলো লুকিয়ে আছে।
আমি জানি, খুব বেশি একটা দূর থেকে আমি শুরু করতে পারবো না। তবুও, শুরু করা।
আমি যতটুকু পারি সেটা তৈরি করে যাবো। আমার পরবর্তী প্রজন্ম যদি চায়, সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। নয়তো, আবারো থেমে যাবে।
দ্যাখা যাক কি হয়।
হাজার বছর দূরের পৃথিবী তো আর দূরবীন দিয়ে দেখতে পাবো না।
তবে, একশো বছর আগে থেকেই না হয় আপাতত একটু হেঁটে আসি।
লিখাটা প্রথম পাবলিশ করেছিলাম ফেসবুকে –
.
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
১১ মার্চ ২০২৪
ঢাকা।


